লেখক পরিচিতি
নৈর্ঋত প্রকাশনের লেখক তালিকা
অনিতা অগ্নিহোত্রী
অনিতা অগ্নিহোত্রী জন্ম ও পড়াশোনা কলকাতায়। অর্থনীতি পড়েছেন প্রেসিডেন্সী কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছোটদের জন্য লেখালিখির শুরু সন্দেশ পত্রিকায়, বারো বছর বয়সে। পরে নিয়মিত লিখেছেন সন্দেশ, আনন্দমেলা, টগবগ ইত্যাদি নানা পত্রিকায়। বড়দের জন্য গল্প উপন্যাস প্রবন্ধ লেখার পাশাপাশি ছোটদের জন্য লিখেছেন অনেক গুলি বই। আকিম ও পরিকন্যে, আকিম নিরুদ্দেশ, বন্দী রাজকুমার, জয়রামের সিন্দুক, এবু গোগো, গাছেরা গেল বেড়াতে। দেশের নানা প্রান্তে ঘুরেছেন। তাঁর লেখায় তাই আসে অচেনা বন পাহাড় আর অদেখা মানুষ জনের জীবন। কিন্তু কলমের মায়ায় তাদের একেবারে আপন বলেই মনে হয়। মানুষ, পশু পাখি, প্রকৃতি সব মিলিয়ে যে পৃথিবী, তার কথা বার বার ফিরে আসে গল্প গুলিতে। বিবাহ সূত্রে মহারাষ্ট্র কে আপন করেছেন তাই অনিতা অগ্নিহোত্রী নামে লেখেন ১৯৮২ থেকে। নানা সাহিত্য পুরস্কারে সম্মানিত। অনূদিত হয়েছেন দেশের ও বিদেশের নানা ভাষায়।
অমর মিত্র
কলকাতায় বড় হয়েছেন, মফসসল বাংলায় দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেছেন এই কথাসাহিত্যিক। গল্প লিখছেন পঞ্চাশ বছর ধরে। গল্প ও উপন্যাস লিখনে বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে পরিভ্রমণ করেন। ২০০৬ সালে ধ্রুবপুত্র উপন্যাসের জন্য সাহিত্য অ্যাকাডেমি, ২০০১ সালে অশ্বচরিত উপন্যাসের জন্য বঙ্কিম পুরস্কার, ১৯৯৭ সালে স্বদেশযাত্রা ছোটগল্পের জন্য সর্বভারতীয় কথা পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১৭ সালে যুগশঙ্খ পুরস্কার, ২০১৮ সালে শরত সমিতি প্রদত্ত রৌপ্য পদক, ২০১০ সালে মিত্র ও ঘোষ সম্মান পেয়েছেন। ২০১৯ সালে কাজাখস্তানে এশীয় লেখকদের সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধনী মঞ্চে কাজাখ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে উপস্থিত একমাত্র ভারতীয় লেখক ও বক্তা। বিভিন্ন ভাষায় তাঁর গ্রন্থ অনূদিত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বই: ধ্রুবপুত্র, অশ্বচরিত, আগুনের গাড়ি, ধনপতির চর, মোমেনশাহী উপাখ্যান, কুমারী মেঘের দেশ চাই, ও আমার পছন্দপুর, পুনরুত্থান, র্যা ডক্লিফ লাইন, মার্কো পোলোর ভ্রমণ বৃত্তান্ত ২০২০, শ্রেষ্ঠ গল্প, সেরা পঞ্চাশটি গল্প, গাঁওবুড়ো ও অন্যান্য গল্প। ২০২২ সালে প্রথম ভারতীয় ভাষার লেখক হিশেবে গাঁওবুড়ো (অনুবাদেঃ The Old Man of Kusumpur) গল্পের জন্য আন্তর্জাতিক ও’হেনরি পুরস্কার পেয়েছেন।
অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য
হরিনাথ মজুমদার। জন্ম ২২ জুলাই ১৮৩৩, মৃত্যু ১৬ এপ্রিল ১৮৯৬। কাঙাল হরিনাথ নামেও তিনি বিখ্যাত। একই সঙ্গে গীতিকার, সাহিত্যস্রষ্টা, সাংবাদিক ও সম্পাদক। তাঁর কোনো কোনো গান স্বামী বিবেকানন্দকেও মুগ্ধ করেছিল। সেকালে গ্রামে গঞ্জে কাঙাল হরিনাথ একটি অতি পরিচিত জনপ্রিয় নাম। সংবাদ সাহিত্যে তাঁর অবদান বিস্মৃত হবার নয়। তাঁর জীবন ও গ্রন্থবিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা আছে পুস্তক-অন্তর্গত সম্পাদকীয় ভূমিকায়।
অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য। বইটি সম্পাদনা করেছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক গবেষক বঙ্কিম ও রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ বিশ্বভারতীর প্রাক্তন রবীন্দ্র অধ্যাপক। তাঁর প্রথম সম্পাদিত গ্রন্থ বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন (১৯৬৬)। গ্রন্থসম্পাদনাক্ষেত্রে তাঁর খ্যাতি অবিসংবাদিত। তিনি সুদীর্ঘকাল বিশ্বভারতী পত্রিকা সম্পাদনা করে আসছেন। তাঁর বিখ্যাত বই বঙ্কিমচন্দ্রজীবনী।
অলক মণ্ডল
অলক মণ্ডলের জন্ম ১৯৬২ সালের ৭ মে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার ফলতা থানার অন্তর্গত মাতুলালয় মাখনা গ্রামে। পৈতৃক বাসস্থান ওই থানার কৈখালি গ্রামে। নব্বই দশক থেকে সরকারি চাকুরির পাশাপাশি বিভিন্ন সাময়িক পত্রপত্রিকায় সমকালীন সাহিত্য, জীবন, ইতিহাস প্রভৃতি নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখে চলেছেন। ইতিমধ্যে প্রকৃতিপ্রেমিক কালজয়ী কথা সাহিত্যিক বিভূতিভূষণকে নিয়ে তাঁর দুটি গবেষণাগ্রন্থ (নানা রঙের বিভূতিভূষণ ও দেবযানের সাধককবি বিভূতিভূষণ) প্রকশিত হয়েছে ও সুধীজনের প্রশংসা লাভ করেছে। এছাড়া আরও শতাধিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ অগ্রন্থিত অবস্থায় আছে।
ইমদাদুল হক মিলন
ইমদাদুল হক মিলনের জন্ম বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৮ সেপ্টেম্বর। পিতার নাম গিয়াস উদ্দিন খান, মাতা আনোয়ারা বেগম। ঢাকার গেন্ডারিয়া হাই স্কুল থেকে এস এস সি পাশ করেন। এর পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে অর্থনীতিতে সাম্মানিক স্নাতক তাঁর প্রথম প্রকাশিত কিশোর গল্প ‘বন্ধু’, ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত হয় ‘দৈনিক পূর্বদেশ’ পত্রিকায়। প্রথম উপন্যাসের নাম ‘যাবজ্জীবন’ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলা একাডেমির ‘উত্তরাধিকার’ সাহিত্য পত্রিকায়। তিন পর্বে তাঁর দীর্ঘ ‘নূরজাহান’ উপন্যাসটি কালজয়ী সাহিত্য হিসেবে গণ্য। ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন সময়ে দেশবিদেশের নানা পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। ২০১২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ‘নূরজাহান’ উপন্যাসের জন্যে পেয়েছেন ভারতের আই আই পি এম সুরমা চৌধুরী স্মৃতি আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কার। কাজী মাহবুবউল্লাহ পুরস্কার ২০১৮, আই এফ আই সি ব্যাঙ্ক সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮ এবং ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে পেয়েছেন বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘একুশে পদক’। ২০১১ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময় থেকে ২০২১ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক কালের কণ্ঠ’-এর সম্পাদক ছিলেন। এ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় তিনশোটি। তিনি ভারতসহ জার্মানি, ইংল্যান্ড, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, নেপাল, সিঙ্গাপুর ও তাইল্যান্ড ভ্রমণ করেছেন।
কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
জন্ম ১৯৬৪ সাল। পেশায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। পেশার বাইরে তাঁর নেশা হল সাহিত্য, শিল্প আর সংস্কৃতি। তাই একদিকে যেমন বিভিন্ন নামীদামী পত্রপত্রিকায় আর ওয়েবজিনে গল্প, উপন্যাস বা কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে তিনি প্রথিতযশা সাহিত্যিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, ঠিক তেমনই তার পাশাপাশি নাটক, নৃত্যনাটা ও শ্রুতিনাটক রচনা এবং মঞ্চায়নের মাধ্যমে বিকশিত তাঁর প্রতিভা। লেখেন ছোটবড় সকলের জন্যই। আর সে লেখা বিভিন্ন ধারায় বিকশিত। তাই কিশোরদের জন্য অ্যাডভেঞ্চার, কল্পবিজ্ঞান, অলৌকিক বা রূপকথার পাশাপাশি জীবন থেকে উঠে আসা রূঢ় বাস্তবও অনায়াসে চিত্রিত হয়ে যায় তাঁর সাবলীল কলমে। উঠে আসে জীবনের অন্ধকার দিক আর তার বাসিন্দারা। আর সেই সঙ্গে ঝলসে ওঠে জীবনের মানবিক রূপ। কৃষ্ণেন্দুর এ যাবৎ প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৫। তার মধ্যে ‘আরশিনগর’, ‘ভূতের বৃন্দাবন’, ‘দুর্দান্ত দশ’, ‘পাতায় পাতায় ভয়’, ‘গুহা গোখরো গুপ্তধন’ প্রভৃতি গ্রন্থগুলি ইতোমধ্যেই সুধী পাঠকসমাজের কাছে সমাদৃত। সেইসঙ্গে অসংখ্য ছোটবড়ো সংকলনে মুদ্রিত হয়েছে তাঁর লেখা। তাঁর রচিত ও সুরারোপিত বহু নাটক ও নৃত্যনাট্য বিভিন্ন মঞ্চে সফলভাবে মঞ্চস্থ হয়েছে। অপেরা-নাটক “আলাদিন” বেশ কয়েকবার মঞ্চস্থ হওয়া ছাড়াও হাওড়ার একটি নাট্য কর্মশালায় ব্যবহৃত হয়েছে। একসময় সম্পাদনা করেছেন সাহিত্য পত্রিকা “আলো অন্ধকার”। পেয়েছেন কয়েকটি পুরস্কার, যার মধ্যে “কিশোর ভারতী সাহিত্য পুরস্কার”, “সংশপ্তক পুরস্কার”, “টেগোর ভিলেজ সাহিত্য সম্মাননা” প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
গোপাল মিস্ত্রি
জন্ম ২৬ মে ১৯৬৩। ছোটবেলাতেই সাহিত্য চর্চায় হাতেখড়ি। পাঠ্যপুস্তকের সাহিত্য সম্ভারই তাঁর লেখালেখির অনুপ্রেরণা। শুরু হয় কবিতা দিয়ে। বিক্ষিপ্তভাবে দু’একটি লেখা লিটল ম্যাগাজিনে প্রকাশ। আশির দশকের গোড়ায় নিজেও দেওয়াল পত্রিকা প্রকাশ করেছেন। যদিও পরবর্তীকালে পেশাগত কারণে সেই চর্চায় ছেদ পড়ে। প্রায় পঁচিশ বছর পর মনের খিদে মেটাতে আবার লিখতে বসা। সাংবাদিকতা পেশায় দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছরের কর্মজীবনে বহু অভিজ্ঞতায় ভরা তাঁর ঝুলি। বিটিত্র মানুষ দেখেছেন যারা তাঁর লেখার চরিত্র হয়ে উঠেছে। খবরের ভিতরেও খুঁজে পেয়েছেন তাঁর গল্পের চরিত্রদের। তাই সাহিত্যচর্চায় কল্পনার চেয়ে বেশি বাস্তব জীবনের আনন্দ বেদনার ছবি ফুটে ওঠে তাঁর প্রতিটি লেখায়। জীবনের গল্প বলতেই পছন্দ করেন লেখক।
চঞ্চল কুমার ঘোষ
চঞ্চল কুমার ঘোষের জন্ম কলকাতায়। ছেলেবেলা কেটেছে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে। কৈশোর থেকেই তাঁর সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ। বারো বছর বয়সে প্রবন্ধ রচনার জন্য জীবনের প্রথম সাহিত্য পুরস্কার পান। সাহিত্য জীবনের প্রতি পদক্ষেপেই অনুপ্রেরণা মা। সাহায্য পেয়েছেন পরিবারের সকলের। বর্তমানে তিনি সম্পূর্ণভাবে সাহিত্যজগতের সঙ্গে যুক্ত। প্রথম বই ভারতের উপকথা। প্রথম মৌলিক উপন্যাস জগন্নাথ তোমাকে প্রণাম। এই উপন্যাসের জন্য পান আনন্দবাজার ন্যাশানাল ইন্সিয়োরেন্স শারদ অর্ঘ্য সম্মান পুরস্কার। আন্তর্জাতিক বইমেলার তরফে ২০১০ সালে পান সমকালীন শ্রেষ্ঠ প্রতিশ্রুতিমান সাহিত্যিক সম্মান। তাঁর ছোটোগল্প ভারতের একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে। প্রকাশিত উপন্যাস: প্রবাহ, অরণ্য, তমসো মা, চিড়িয়াখানা ও তুই কিছু পারিস না। বর্তমানে তিনি গঙ্গাকে অবলম্বন করে বিবিধ গ্রন্থ প্রয়ণন করে চলেছেন। প্রিয় লেখক শরদিন্দু ও বিভূতিভূষণ। শখ মনের মানুষ খুঁজে বেড়ানো।
চন্দন নাথ
জন্ম ১৯৬৭ সালে। জন্মস্থান মথুরা হলেও আশৈশব বেড়ে ওঠা অধুনা পূর্ব বর্ধমান জেলার বিদ্যানগর গ্রামে। ছোটোবেলার দিনগুলো কেটেছে সবুজে সাজানো প্রকৃতির কোলে। শৈশব-কৈশোরে প্রকৃতির বুক থেকে যত্নে কুড়িয়ে নেওয়া রঙই জড়িয়ে থাকে লেখায়-লেখায়। থাকে সমাজ সচেতনতার বার্তাও। ছোটোদের প্রতি ভালোবাসার টানেই কিশোর বাহিনী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ছোটোদের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিয়মিত ছড়া-কবিতা-গল্প আর নানান ধরনের লেখার পাশাপাশি দীর্ঘ দিন ধরে কিশোর বাহিনীর ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘রঙবেরঙ’-এর সম্পাদনার কাজে যুক্ত। সব বয়সি পাঠক এবং বাচিক শিল্পীর কাছে আদৃত হয়েছে তাঁর ছড়া-কবিতা, এটাই তাঁর বড়ো প্রাপ্তি।
জয়দীপ চক্রবর্তী
জয়দীপ চক্রবর্তী বাংলা সাহিত্যে এই মুহূর্তে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি নাম। কিশোর এবং প্রাপ্তমনস্ক, বাংলা গদ্য সাহিত্যের দু’ধরণের পাঠকের কাছেই তাঁর প্রশ্নাতীত গ্রহণযোগ্যতা। ইতোমধ্যেই ছোটদের এবং বড়দের মিলিয়ে তাঁর কুড়িটির বেশি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। কবিতা ও গদ্য রচনার জন্য পেয়েছেন “কবিতা পাক্ষিক সম্মান”, “দেবযান সাহিত্য পুরস্কার” এবং “উত্তরাধিকার সাহিত্য পুরস্কার”। ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক হিসেবে তিনি বারুইপুর হাই স্কুলে কর্মরত। লেখালেখি ছাড়াও তাঁর পছন্দ রবীন্দ্রনাথের গান আর নিখাদ আড্ডা।
জয়ন্ত দে
“পেন্ডুলাম” লিখে শুরু হয়েছিল জয়ন্ত দে’র গল্পের ভুবন। এর পরে একে একে লেখেন অবিস্মরণীয় সব ছোটগল্প। লেখালিখির প্রথম পর্বেই তাঁর ছোটগল্প সম্মানিত হয় পশ্চিমবঙ্গ বাংলা অকাদেমি প্রদত্ত সোমেন চন্দ পুরস্কারে। এই বাংলার সব নামী পত্রপত্রিকা তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। ওপার বাংলাতেও তাঁর গল্প সমান সমাদৃত। বাংলাদেশ থেকেও প্রকাশিত হয়েছে একাধিক বই। লেখেন ছোটদের গল্প, উপন্যাস। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা চল্লিশ। পেশায় সাংবাদিক ও একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক। পেয়েছেন একাধিক সাহিত্য পুরস্কার, নামি পত্রপত্রিকায়।
ড. অশোককুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
ড. অশোক কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় M.Sc. Ph.D মহোদয় পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলাস্থ প্রসাদপুর (ব্লক জাঙ্গিপাড়া) গ্রামে এক নৈষ্ঠিক শ্রীরামকৃষ্ণ-ভক্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সঙ্গীতাচার্য পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়, মাতা শ্রীমতী হরিমতী দেবী। শ্রীরামকৃষ্ণ বেদান্তমঠের (কলিকাতা) পঞ্চম অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামীপ্রজ্ঞানানন্দ মহারাজের মন্ত্রশিষ্য ও তাঁর পূর্বাশ্রমের ভ্রাতুষ্পুত্র। বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরের কৃতী ছাত্র ড. বন্দ্যোপাধ্যায় ছাত্রাবস্থা থেকেই সংঘের প্রবীণ ও নবীন সন্ন্যাসী ব্রহ্মচারী মহারাজগণের পূত সান্নিধ্য লাভ করে ধন্য হন। কর্মজীবন কেটেছে রাণীগঞ্জ টি. ডি. বি. কলেজে রসায়ন শাস্ত্রের অধ্যাপনা করে। তিনি ‘স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ’ জীবনীগ্রন্থের প্রণেতা। সাহিত্যানুরাগী অধ্যাপক অবসর জীবনে সঙ্গীতাচার্যের কথকতার পুঁথি যথাযথ সম্পাদনা করে গ্রন্থাকারে সুধী সমাজকে উপহার দিয়েছেন। আমরা এই গ্রন্থের বহুল প্রচার কামনা করি।
তপন বন্দ্যোপাধ্যায়
আনন্দমেলায় ‘ভুতুড়ে দুপুর’ উপন্যাস লিখে ছোটোদের সাহিত্যজগতে লেখকের প্রবেশ। তারপর একের পর এক ছোটোদের গল্প ও উপন্যাস লিখে চলেছেন গত চল্লিশ বছর ধরে। বড়োদের লেখার পাশাপাশি ছোটোদের লেখাতেও তাঁর অবাধ বিচরণ। লেখাপড়া বাদুড়িয়া এল এম এস হাই স্কুল, আশুতোষ কলেজ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশুদ্ধ গণিতে এম এস সি (১ম শ্রেণি)। কর্মজীবন – হাইস্কুলে সাত মাসের শিক্ষকতা, ব্যাঙ্কে দু-বছর কেরানিগিরি, শেষে ডবলিউ বি সি এস পাশ করে প্রশাসনিক চাকরিতে যোগদান ১৯৭২-এ। ব্যাঙ্কে চাকুরিরত অবস্থায় প্রথম কবিতার বই ‘ভাবনায় সাম্প্রতিক শব্দগুলি’ প্রকাশ ১৯৭১-এ। বড়োদের ও ছোটোদের মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় দেড়শো গ্রন্থ প্রকাশিত। ২০০০-এ ‘নদী মাটি অরণ্য’ উপন্যাসের জন্য বঙ্কিম পুরস্কার লাভ করেন। ২০১০-এ সাহিত্য অকাদেমির আমন্ত্রণে বেইজিং আর্ন্তজাতিক বইমেলায় বক্তা হিসাবে আমন্ত্রিত। শেখর দাসের পরিচালনায় চলচ্চিত্রায়িত হয় ‘মহুলবনীর সেরেঞ’ (২০০৪) ও পরের বছরে শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার হিসাবে ‘বি এফ জে এ’ পুরস্কার লাভ। ২০১৯-এ অনুবাদের জন্য ভারত সরকারের সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ। অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে পেয়েছেন ছোটোগল্পের জন্য মহাদিগন্ত পুরস্কার ২০১২-এ. ছোটোদের লেখার জন্য দীনেশচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার ২০১১-এী, ২০১৮-এ কবি জয়দেব পদ্মাবতী স্মারক সম্মান। এছাড়া বহু সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান দিয়েছে সম্মাননা ও সংবর্ধনা।
তৃষ্ণা বসাক
তৃষ্ণা বসাক এই সময়ের বাংলা সাহিত্যের একজন একনিষ্ঠ কবি ও কথাকার। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, কল্পবিজ্ঞান, মৈথিলী অনুবাদকর্মে তিনি প্রতি মুহুর্তে পাঠকের সামনে খুলে দিচ্ছেন অনাস্বাদিত জগৎ। জন্ম কলকাতায়। শৈশবে নাটক দিয়ে লেখালেখির শুরু, প্রথম প্রকাশিত কবিতা ‘সামগন্ধ রক্তের ভিতরে’, দেশ, ১৯৯২। প্রথম প্রকাশিত গল্প ‘আবার অমল’ রবিবাসরীয় আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৯৯৫। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.ই. ও এম.টেক তৃষ্ণা পূর্ণসময়ের সাহিত্যকর্মের টানে ছেড়েছেন লোভনীয় অর্থকরী বহু পেশা। সরকারি মুদ্রণ সংস্থায় প্রশাসনিক পদ, উপদেষ্টা বৃত্তি, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শী অধ্যাপনা, সাহিত্য আকাদেমিতে আঞ্চলিক ভাষায় অভিধান প্রকল্পের দায়িত্বভার-প্রভৃতি বিচিত্র অভিজ্ঞতা তাঁর লেখনীকে এক বিশেষ স্বাতন্ত্র্য দিয়েছে। প্রাপ্ত পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে- সাহিত্য আকাদেমি ভ্রমণ অনুদান ২০০৮, পূর্ণেন্দু ভৌমিক স্মৃতি পুরস্কার ২০১২, সম্বিত সাহিত্য পুরস্কার ২০১৩, কবি অমিতেশ মাইতি স্মৃতি সাহিত্য সম্মান ২০১৩, ইলা চন্দ স্মৃতি পুরস্কার (বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ) ২০১৩, ডলি মিদ্যা স্মৃতি পুরস্কার ২০১৫, সোমেন চন্দ স্মারক সম্মান (পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি) ২০১৮, সাহিত্য কৃতি সম্মান (কারিগর) ২০১৯, কবি মৃত্যুঞ্জয় সেন স্মারক ২০২০, নমিতা চট্টোপাধ্যায় সাহিত্য সম্মান, ২০২০ ও অন্যান্য আরো পুরস্কার। বর্তমানে কলকাতা ট্রান্সলেটরস ফোরামের সচিব।
দিলিপ দাস
এই ‘খুদে বৈজ্ঞানিক’ কমিক্সটির কথা বলতে গেলে বলতে হয় দীর্ঘ প্রায় পঁচিশ বছরের ওপরে “কিশোর জ্ঞানবিজ্ঞান” পত্রিকার জন্মলগ্ন থেকেই ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়ে আসছিল। যাঁর সম্পাদক ও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শ্রদ্ধেয় রবিন বল মহাশয়। আমার দুর্ভাগ্য যে তাঁর অকস্মাৎ তিরধান হয় এবং যথারীতি কমিক্সটিরও ধারাবাহিকতায় ছেদ পরে। যদিও তাঁর পুত্র সোমনাথ বল পত্রিকাটি চালিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছেন। অদ্যবধি প্রকাশিত কমিক্সগুলো হয়তো এক সময় হারিয়ে যাবে। সেই আশঙ্কায় আমার বন্ধুপ্রতিম তরুণ প্রকাশক মনোজ গাঁড়ারকে কমিক্সগুলো দেখাই। সে অনেক ভাবনা চিন্তা করে এক সময় রাজি হয় এবং ওগুলো রঙ্গিন করতে বলে। তারই ফলস্বরূপ এই “খুদে বৈজ্ঞানিক” কমিক্সের বই হিসাবে আত্মপ্রকাশ। যদিও এর অনেক গল্প হারিয়ে গেছে। অবশিষ্ট যা ছিল কুড়িয়ে বাড়িয়ে প্রথম খন্ড প্রকাশ করা গেল। এই কর্মযজ্ঞে আমার বন্ধু গৌতম দে ও স্বাগত দত্ত বর্মনের সহযোগিতা অনস্বীকার্য। এখন খুদে পাঠকদের ভাল লাগলে পরবর্তি খন্ডগুলো প্রকাশ করা যেতে পারে।
দীপান্বিতা রায়
দীপান্বিতা রায়ের ছোটবেলা কেটেছে শিল্পশহর বার্নপুরে। স্কুলের পাঠ সেখানেই। তারপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক ৫ সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা। পেশায় বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সাংবাদিক। লেখালিখির শুরু ২০০৮ সাল থেকে। ইতিমধ্যেই ছোটদের এবং বড়দের লেখার জগতে পরিচিত নাম। ছোটদের জন্য রূপকথা, অ্যাডভেঞ্চার, ভূত, গোয়েন্দা কিংবা কল্পবিজ্ঞান সবই তাঁর কলমে সমান মনোগ্রাহী। তাঁর লেখা বাহারে বারো, লাল-নীল রাজার দেশ, তেরোর ত্রাস, গবেষণাগারে গুপ্তচর, বড়মার বাক্স কিংবা মহীদাদুর অ্যান্টিডোট কিশোরদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। জাতীয় স্তরে ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট তাঁর বই প্রকাশ করেছে এবং সেই বই ভারতের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিতও হয়েছে। দীপান্বিতা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিশু কিশোর অ্যাকাডেমির এক্সিকিউটিভ কমিটির মাননীয় সদস্য এবং অ্যাকাডেমি থেকে প্রকাশিত পত্রিকা চির সবুজ লেখার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। অ্যাকাডেমির তরফে প্রতিবছর যে আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করা হয়, তিনি তারও কমিটি মেম্বার। চলচ্চিত্র উৎসবের বিভিন্ন প্রকাশনার দায়িত্বও তাঁর ওপরেই থাকে। দীপান্বিতা রায় পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী পুরস্কার, গজেন্দ্রকুমার মিত্র সুমথনাথ ঘোষ পুরস্কার, সাধনা সেন পুরস্কার, দশভুজা পুরস্কার এবং নীল দিগন্ত পুরস্কার।
দেবদওা বন্দ্যোপাধ্যায়
দেবদত্তা বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ লেখিকার জন্ম উত্তরবঙ্গোর ছোট্ট জনপদ মালবাজারে। পাহাড় ঝরণা আর চা বাগানের মাঝে ডুয়ার্সে বড় হয়েছেন। লেখার শখ ছোট থেকেই, বিভিন্ন দেওয়াল পত্রিকা, লিটিল ম্যাগ থেকে আস্তে আস্তে শুকতারা, নবকল্লোল, আনন্দমেলা, কিশোর ভারতীর পাতায় আত্মপ্রকাশ। বৈবাহিক সূত্রে বর্তমানে বৃহত্তর কলকাতার বাসিন্দা। দুই সন্তানের জননী। নেশায় এক নিরলস সাহিত্য কর্মী, লিখতে ভালোবাসেন সব রকম বিষয়ের উপর। ছোটদের জন্য রহস্য গোয়েন্দা বা ভৌতিক জরের পাশাপাশি প্রাপ্তমনস্কদের জন্য ঐতিহাসিক, সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস লিখতেও পছন্দ করেন। বিষয় থেকে বিষয়াস্তরে যেতেই ভালোবাসেন। এই বইতে রয়েছে একটি ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস ও চারটি বড় গল্প। প্রতিটি গল্প সত্যকে সামনে রেখে কিছুটা কল্পনার আশ্রয়ে গড়ে উঠেছে।
নলিনী বেরা
জন্ম ২০ জুলাই ১৯৫২, পশ্চিমবঙ্গ ওড়িশা সীমান্তের কাছাকাছি সুবর্ণরেখা নদীতীরে জঙ্গলাকীর্ণ বাছুরখোঁয়াড় গ্রামে এক সাধারণ দরিদ্র পরিবারে। রোহিণী রুক্মিণীদেবী হায়ার সেকেন্ডারী স্কুলের গণ্ডী পেরিয়েই বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন। এরপর অদ্ভুত কষ্টকর এক বোহেমিয়ান জীবন। ঝাড়গ্রাম ও কলকাতায় অর্থনীতি নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়াশুনো। ডবলিউ.বি.সি.এস পরীক্ষায় এ গ্রুপে স্থান পেয়ে রাজ্য সরকারের পদস্থ আধিকারিক। কবিতা দিয়ে সাহিত্য জীবন শুরু। প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস ‘ভাসান’। প্রথম গল্প ‘ঝাড়েশ্বর পানীর ইলিশ ধরা’। বঙ্কিমচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার পান ২০০৮-এ, ‘শবরচরিত’ এবং আনন্দপুরস্কার পান ২০১৯-এ ‘সুবর্ণরেণু সুবর্ণরেখা’ উপন্যাসের জন্য।
ব্রতীন দাস
সীমান্ত গ্রামের ধুলোবালিতে বেড়ে ওঠা। কাঁটাতারের যন্ত্রণা ভুলতে সাঁতরে পার হওয়া ইছামতী। সময়ের সঙ্গে শুধুই জড়িয়ে পড়া স্বপ্নের প্যাঁচে। লিটলম্যাগ। মফঃস্বলের পত্রিকায় হাতেখড়ি। পেটে খিদে। ফেরার পথ ছিল না। তাই শুধুই লেখা। লিখতে লিখতে ভাত জোগাড়ের চেষ্টা। কত লেখা যে পুষ্টি পায়নি। কিন্তু জীবনকে কথা দিয়েছি, লিখেই যাব। গত ২০ বছর বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রে সাংবাদিকতা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। আরও শিখতে চাই। মিশে যেতে চাই অজস্র জীবনের সঙ্গে। ব্যক্তিগত কান্না নেই, নেই ব্যক্তিগত জয়।
মনজিৎ গাইন
তরুন জনপ্রিয় সাহিত্যিক মনজিৎ গাইন-এর জন্ম ১৯৭৮ সালের ২রা জুলাই। বর্তমান বাসস্থান উত্তর ২৪ পরগনার ধান্যকুড়িয়া-য়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক সাহিত্যে এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। শিক্ষকতা করেন উত্তর ২৪ পরগনার মছলন্দপুরের রাজবল্লভপুর উচ্চ বিদ্যালয়-এ। ভারত সরকারের সংস্কৃতি দফতরের আমন্ত্রণে সংস্কৃতি বিষয়ে দিল্লিতে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। বর্তমান সময়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় তরুণ সাহিত্যিক মনজিৎ ইতিমধ্যে ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশ মিলিয়ে ৪০টির ওপর গল্প – উপন্যাসের বই লিখেছেন। প্রতিটি বই খুবই জনপ্রিয়। গোয়েন্দা, থ্রিলার, সাইন্স ফিকশন, অ্যাডাল্ট ফিকশন, ঐতিহাসিক, মাইথোলজিক্যাল, রূপকথা, হাসি, মানবিক মূল্যবোধ, ভূত সব ধরনের মৌলিক লেখাতেই তিনি সিদ্ধহস্ত। তাঁর কিশোর গোয়েন্দা সতুকা পাঠকদের খুবই প্রিয়।
মিলাডা গঙ্গোপাধ্যায়
জন্ম ১৯১৩। মৃত্যু ২০০০। অবনীন্দ্রনাথের প্রিয় দৌহিত্র মোহনলালের পত্নী। অকাল প্রয়াত পিতা-মাতার সন্তান এই দৌহিত্রটি অবনীন্দ্রনাথের স্নেহ-সান্নিধ্যে বড়ো হয়েছিলেন। তাঁর পত্নী মিলাডাও অবনীন্দ্রনাথ অত্যন্ত স্নেহের পাত্রী ছিলেন। অবনীন্দ্রনাথের বেলা-শেষের জীবন দৌহিত্র-বধূর সেবায়, শুশ্রুষায় ভরে উঠেছিল। চেকোস্লোভাকিয়ার কন্যা, ঠাকুরবাড়ির এই বিদেশিনি বধূ ভালোবেসেছিলেন এই দেশকে, বাংলা ভাষাকে। বাংলার পাঁচালী ও ব্রতকথা চেক ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন। ছোটোদের কথা ভেবে অজস্র রূপকথা লিখেছেন, অনুবাদ করেছেন। নাগা- সমাজের উপর চেক ও ইংরেজি ভাষায় বই লিখেছেন। ইংরেজিতে লেখা বই দুটির নাম এ পিলগ্রিমেজ টু দ্য নাগাজ’। ও নাগা আর্ট’। এই দেশ, এই দেশের মানুষজন, প্রকৃতি, বিশেষত বধূ হিসেবে ঠাকুরবাড়িতে দিনযাপনের অভিজ্ঞতা নিয়ে চেক ভাষায় একটি বই লিখেছিলেন। সে বইটির নাম অবরাজকী জ বেনগালস্কা।
মৃণালকান্তি দাস
মৃণালকান্তি দাস। জন্ম ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৬। কলকাতার রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানে। শৈশব কটেছে হাবড়ায়। স্কুলজীবন কেটেছে কলকাতার পিকনিক গার্ডেনে। মডার্ন স্কুল পরে হেরম্বচন্দ্র কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক। ছাত্রজীবন থেকে লেখালেখির কাজে যুক্ত। ২০০৪ থেকে সাংবাদিকতার পেশায় কর্মরত। স্বশিক্ষিত চিত্রশিল্পী হিসাবে বহু বইয়ের প্রচ্ছদ নির্মাণ। সহকর্মী, বন্ধুদের প্রভাবে মুক্তচিন্তার পথ উন্মোচিত। নেশা বই পড়া, বইয়ের প্রচ্ছদ-অলঙ্করণ, মেহনতি মানুষের জীবনের গল্প শোনা আর নতুন কোনও জায়গায় হারিয়ে যাওয়া…
মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায়
জন্ম ১৯৭২ সালের ২৭শে ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলায়। ছোট থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি নৃত্যকলা চর্চার মাধ্যমে শিল্প ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয়। পড়াশোনা বাণিজ্য নিয়ে হলেও সাহিত্যের প্রতি প্রীতি শৈশব থেকেই। সেই টান থেকেই লেখালেখির শুরু। লেখেন ছোট বড় সকলের জন্যই। আনন্দবাজার স্কুল, সাপ্তাহিক বর্তমান, আজকাল রবিবাসর, সুখবর, কথাসাহিত্য, গল্পপাঠ, পুরুলিয়া দর্পণ, ভবিষ্যৎ সহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক, অবাণিজ্যিক মুদ্রিত ও ওয়েব ম্যাগাজিনে গল্প, অণুগল্প ও কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে একটি অণুগল্পের ইবুক ও একটি ছোটগল্প সংকলন। একক অণুগল্পের সংকলন শপিজেন বাংলা থেকে। নাম ‘একটু শোনো’। আর খোয়াই পাবলিশিং হাউস থেকে প্রকাশিত হয়েছে বড়দের ভৌতিক ও অলৌকিক গল্পের সংকলন। নাম ‘বড়দের ভয়ের তেরো’। এছাড়াও বহু যৌথ সংকলনে ও পত্রপত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে চলেছে তাঁর গল্প এবং অণুগল্প।
রতনতনু ঘাটী
রতনতনু ঘাটীর জন্ম ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুন মেদিনীপুরে। বাবা ও মা স্বর্গত সন্তোষকুমার এবং সুভদ্রা। স্নাতকোত্তর পড়াশোনা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে আনন্দবাজার পত্রিকায় চাকরি। ‘আনন্দমেলা’ পত্রিকার সহ-সম্পাদকের পদ থেকে অবসর গ্রহণ ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে। এ কালের জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক। পঁচাশিটিরও বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে। ইংরেজি ও ওড়িয়া ভাষায় তাঁর লেখা অনূদিতও হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে পনেরোটি শিশু-কিশোর বই। ‘কমিকস দ্বীপে টিনটিন’ বইটির জন্যে পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী পুরস্কার’। দ্য এশিয়াটিক সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া- কলকাতা এবং পারুল প্রকাশনীর যৌথ শিশুসাহিত্য পুরস্কার, হলদিয়া পৌরসভার নাগরিক সংবর্ধনা ছাড়াও পেয়েছেন আরও অনেক পুরস্কার। বেড়াতে ভালোবাসেন। এ পর্যন্ত লন্ডন, প্যারিস, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, ভেনিস, ইতালি, রোম, মাউন্ট তিতলিস, সুইজারল্যান্ড, আমস্টারডাম, ব্রাসেলস, ভাটিকান সিটি এবং বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর নানা দেশে বেড়াতে গেছেন।
রাজশেখর বসু
রাজশেখর বসু (১৮৮০-১৯৬০) পেশায় একজন রসায়নবিদ হয়েও তাঁর সাহিত্যকীর্তির জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। লেখক ও পাঠকমহলে তিনি ‘পরশুরাম’ ছদ্মনামে খ্যাত।
রাজশ্রী বসু অধিকারী
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম এক কর্মী সদস্য রাজশ্রী বসু অধিকারী। লেখক জীবন শুরু ২০০৮ সালে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত গল্প “আমি ভাল আছি” দিয়ে। আনন্দমেলা কিশোরভারতী শুকতারা আমপাতা জামপাতা ইত্যাদি পত্রিকা ও শারদীয়ায় অসংখ্য ছোটদের গল্প ও দুটি ধারাবাহিক উপন্যাস লিখলেও লেখকের এযাবত প্রকাশিত বইগুলো মূলতঃ বড়দের জন্য। এই “গিনি যখন বিঞ্জানী” বইটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত শিশুকিশোরপাঠ্য উপন্যাস।
রামেশ্বর দত্ত
রামেশ্বর দত্তের জন্ম কলকাতায়। কৈশোর, যৌবন কেটেছে কলকাতা বসবাসে। মাঝে জীবনের ত্রিশটা বছর মহারাষ্ট্রের নাগপুর, চন্দ্রপুরকে কেন্দ্র করে চাকরী সূত্রে বসবাস। বর্তমানে স্থায়ী কলকাতাবাসী। সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ বাল্যকাল থেকেই। নানান পত্র পত্রিকায় বহু লেখা প্রকাশিত হয়ে থাকে। প্রথম লেখা উপন্যাস, ‘বৃত্ত, ২০১৭ সালে ‘বিভূতিভূষণ স্মৃতি’ পুরস্কারে সম্মনিত। প্রকাশিত উপন্যাস ‘অন্য বৃত্ত’, ‘একজোড়া উপন্যাস’, ‘জানার মাঝে অজানারে, ইংরেজি Long gone the wind: 1947-71 in Bengal & Usha the Girl’, জীবনী ভিত্তিক; ‘প্রসঙ্গঃ শ্রী অরবিন্দ ও শ্রী মা’, রহস্য ‘পিনাকী রহস্য’ ও ছোটগল্প সঙ্কলন ‘সুখ সকালের আশায়’। প্রিয় লেখক- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সমরেশ বসু, আশাপূর্ণা দেবী। শখ-অজানা বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়া।
শান্তনু বসু
জন্ম ১৯৭৩ সালের ২৬ জানুয়ারি, উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়। বাবা সরোজকুমার বসু। মায়ের নাম অনিমা বসু। স্কুলের পাঠ, বারাসত প্যারীচরণ সরকার রাষ্ট্রীয় উচ্চ বিদ্যালয়ে। তারপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূতত্ত্বববিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পেশায় সরকারি আধিকারিক। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনে যুগ্ম সচিব পদে কর্মরত। নাটক রচনা দিয়ে লেখালেখি শুরু। প্রথম মৌলিক নাটক ‘রিয়েলিটি’ প্রকাশিত হয় ২০১০ সালে। এই নাটকের জন্য জাতীয় স্তরে একটি একাঙ্ক নাটক প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ নাট্যকারের পুরস্কার পান। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখির সূচনা ২০১৩ সাল থেকে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা থেকে লেখকের অনেকগুলি কিশোর উপন্যাস ও কিশোর গল্প সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। নৈর্ঋত প্রকাশন থেকে বেরিয়েছে কিশোরদের জন্য লেখা ঐতিহাসিক আখ্যান ‘ইঙ্গবণিকের বঙ্গবিজয়’।
শাশ্বতী চন্দ
শাশ্বতী চন্দের জন্ম শিলিগুড়িতে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজিতে স্নাতকোত্তর। পেশাগত জীবনে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। লেখালেখির জগতে প্রবেশ ছাত্রজীবনে ‘শুকতারা’-এ প্রকাশিত গল্পের মাধ্যমে। অদ্যাবধি অসংখ্য গল্প প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন পত্রিকায়। শিশু কিশোর সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদানের পাশাপাশি প্রাপ্তবয়স্ক সাহিত্যেও সমান স্বচ্ছন্দ। প্রকাশিত গ্রন্থ ‘পদ্মপাতায় জল’, ‘এবং আগামীকাল’ ও ‘টুপুরের পুষ্যিরা’। প্রিয় নেশা বই পড়া ও বেড়ানো।
শিশির বিশ্বাস
শিশির বিশ্বাস। জন্ম ৫ জানুয়ারি ১৯৪৯। অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিক। প্রথম প্রকাশিত গল্প বিখ্যাত ‘মৌচাক’ পত্রিকায়। কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ততার কারণে সাহিত্যচর্চা অনিয়মিত। তবু যখনই সুযোগ হয়েছে কলম ধরেছেন ছোটদের জন্য। প্রশংশিত হয়েছে পাঠকের দরবারে। কিশোর সাহিত্য ছাড়াও লিখেছেন বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক গল্প-উপন্যাস। এ পর্যন্ত ‘শুকতারা’, ‘সন্দেশ’, ‘কিশোর ভারতী’, ‘আনন্দমেলা’, ‘শিশুমেলা’, ‘রঙবেরঙ’, ‘জলফড়িং’ প্রভৃতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত গল্প ও উপন্যাসের সংখ্যা কয়েকশত। প্রথম গ্রন্থ ‘নিউস্ক্রিপ্ট’ প্রকাশিত ‘বাঘবন্দি মন্তর’। তারপর একে একে প্রকাশিত হয়েছে আরো বহু গ্রন্থ। তার কয়েকটিঃ ‘শিশু সাহিত্য সংসদ’ প্রকাশিত ‘আম বাগানের পদ্মগোখরো’, ‘মৃন্ময়ী মন্দিরের তোপদার’, ‘সোনার পাহাড়’, ‘পাথরের চোখ’, জনাইগড়ের জঙ্গল রহস্য’।’ এছাড়া গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন দেব সাহিত্য কুটির, নির্মল বুক এজেন্সি, মায়াকানন, জয়ঢাক, অরণ্যমন প্রভৃতি প্রকাশন সংস্থা। তার কয়েকটি:’নিশুতি রাতে আসে’, ‘সাঁঝরাতের অন্ধকার’, ‘জল জঙ্গল নরখাদক সমগ্র ১ম খন্ড’, ‘মৃত্যু যখন ডাক দেয়’, ‘বাদাবনে আতঙ্ক’, ‘হটাৎ এল জার্মাদ’, ‘বর্মার অন্ধকারে’, ‘মায়ংয়ের মন্ত্র’, সাক্ষী ছিলেন পূর্ণচন্দ্র’ প্রভৃতি।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২ নভেম্বর অবিভক্ত ভারতের বিক্রমপুরে। বাবার রেলের চাকরির সুবাদে শৈশবে তাঁর ছিল নানা জায়গায় বসবাসের এক যাযাবর জীবন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে শুরু হয় তাঁর এপার বাংলার জীবন। অসম, বিহার, উত্তরবঙ্গে কেটেছে শৈশবের দিনগুলো। প্রথমে জলপাইগুড়ির ফণীন্দ্রদেব ইনস্টিটিউশনে ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়াশুনো করেন। এর পর কুচবিহারের মিশনারি স্কুলের বোর্ডিং জীবন। তারপর ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আই. এ. পাশ করেন। কলকাতার কলেজ থেকে বি. এ. এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাসাহিত্যে স্নাতকোত্তর পাশ করেন।
স্কুলে শিক্ষকতা দিয়ে শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন। তারপর সাংবাদিকতা আনন্দবাজার পত্রিকায়। তাঁর প্রথম গল্প ‘জলতরঙ্গ’ প্রকাশিত হয় ‘দেশ’ পত্রিকায়। প্রথম উপন্যাস ‘ঘুণপোকা’ ‘দেশ’ পত্রিকার শারদীয় সংখ্যায় প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে। প্রথম কিশোর উপন্যাস ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’। অজস্র কিশোর গল্পের স্রষ্টা। ১৯৭৩ এবং ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে দু’বার আনন্দ পুরস্কার এবং ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে কিশোর সাহিত্যের জন্যে পান ‘বিদ্যাসাগর পুরস্কার’। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে সাহিতা আকাদেমি পুরস্কার’ ‘মানবজমিন’ উপন্যাসের জন্যে। ২০১২ খ্রিস্টাব্দে ‘বঙ্গবিভূষণ’ এবং ২০২১ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্য আকাদেমির ফেলো নির্বাচিত হন।
শুভমানস ঘোষ
জন্ম ১৭ অক্টোবর ১৯৫৮ হাওড়ার শালকিয়ায়। বর্তমানে বাস হুগলি জেলার ভদ্রকালীতে। শিক্ষাগত যোগ্যতা এম.এ., বি.এড., পি এইচডি.। পেশা অধ্যাপনা। ছাত্রাবস্থাতেই লেখালিখির সূত্রপাত। ছোটদের -বড়দের গল্প-উপন্যাসে সমান স্বচ্ছন্দ লেখকের ছোটদের জন্য প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ‘গল্প অল্প স্বল্প’ (১৯৯৮)। ছোটদের জন্য প্রথম উল্লেখযোগ্য গল্প ‘সন্দেশ’ পত্রিকায় ‘খাসনবিশের খাসা যন্তর’ (১৯৮৯)। বড়দের জন্য লিখিত প্রথম উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘বন্ধুর বাড়ি’ প্রকাশিত হয় শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকায় (২০০৯)। ছোটদের ছোটগল্পে বিশিষ্ট অবদানের জন্য গৌরবময় অজগর পুরস্কার (২০১০), ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর স্মারক সম্মান পুরস্কার (২০১৮), শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের জন্য বটুক নন্দী স্মৃতি পুরস্কার (২০২১) ও বাংলার ছোটগল্পের অগ্রপথিক রূপে এপার ওপার (২০২২) পুরস্কার লাভ করেছেন।
শেখর বসু
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২ নভেম্বর অবিভক্ত ভারতের বিক্রমপুরে। বাবার রেলের চাকরির সুবাদে শৈশবে তাঁর ছিল নানা জায়গায় বসবাসের এক যাযাবর জীবন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে শুরু হয় তাঁর এপার বাংলার জীবন। অসম, বিহার, উত্তরবঙ্গে কেটেছে শৈশবের দিনগুলো। প্রথমে জলপাইগুড়ির ফণীন্দ্রদেব ইনস্টিটিউশনে ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়াশুনো করেন। এর পর কুচবিহারের মিশনারি স্কুলের বোর্ডিং জীবন। তারপর ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আই. এ. পাশ করেন। কলকাতার কলেজ থেকে বি. এ. এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাসাহিত্যে স্নাতকোত্তর পাশ করেন।
স্কুলে শিক্ষকতা দিয়ে শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন। তারপর সাংবাদিকতা আনন্দবাজার পত্রিকায়। তাঁর প্রথম গল্প ‘জলতরঙ্গ’ প্রকাশিত হয় ‘দেশ’ পত্রিকায়। প্রথম উপন্যাস ‘ঘুণপোকা’ ‘দেশ’ পত্রিকার শারদীয় সংখ্যায় প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে। প্রথম কিশোর উপন্যাস ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’। অজস্র কিশোর গল্পের স্রষ্টা। ১৯৭৩ এবং ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে দু’বার আনন্দ পুরস্কার এবং ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে কিশোর সাহিত্যের জন্যে পান ‘বিদ্যাসাগর পুরস্কার’। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে সাহিতা আকাদেমি পুরস্কার’ ‘মানবজমিন’ উপন্যাসের জন্যে। ২০১২ খ্রিস্টাব্দে ‘বঙ্গবিভূষণ’ এবং ২০২১ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্য আকাদেমির ফেলো নির্বাচিত হন।
শ্যামল চক্রবর্তী
জন্ম ১৯৫৭। উদয়পুর রমেশ স্কুল, মহারাজা বীরবিক্রম কলেজ ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনো করেন। বস্তু বিজ্ঞান মন্দিরে গবেষণা। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের রসায়ন বিভাগে অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবনের শুরু। বাইরের দেশে কিছুকাল উচ্চতর গবেষণা। বর্তমানে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে অধ্যাপনা করেন। বহু জনপ্রিয় বিজ্ঞান গ্রন্থের রচয়িতা। বইয়ের সংখ্যা দেড়শতাধিক। ১৯৯৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সত্যেন্দ্রনাথ পুরস্কারে সম্মানিত। ‘সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল’ ও ‘কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান’ কর্তৃক দুই ভিন্ন বছরে ‘গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য’ পুরস্কারের সম্মানিত ‘বর্ষসেরা বিজ্ঞান লেখক’ হিসাবে সম্মানিত করেছেন। ২০০৫ সালে ‘জান বিচিত্রা’ পুরস্কার ও ২০০৯ সালে বিজ্ঞান সাহিত্যে ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ লাভ করেছেন। ২০১২ সালে অর্জন করেছেন ‘মুজফফর আহমদ স্মৃতি পুরস্কার। বিজ্ঞান সাহিত্য রচনার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিতে ভারত সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ কর্তৃক ২০১২ সালে জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত। ২০১৪ সালে ‘গণিত প্রতিভা শ্রীনিবাস রামানুজন’ বইয়ের জন্য দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাসম্পন্ন ‘নরসিংহ দাস পুরস্কার’ পেয়েছেন। লেখক বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ আন্দোলনে দীর্ঘকাল জড়িত।
সঞ্জয় কর্মকার
সঞ্জয় কর্মকারের জন্ম ১৫ আগস্ট। বসবাস উত্তর চব্বিশ পরগনার কাঁকিনাড়ায়। স্নাতকোত্তর স্তরে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিডিয়া নিয়ে পড়াশোনা। বর্তমানে শিক্ষকতার পেশায় নিযুক্ত। লেখালিখির সূচনা মূলত কিশোর বয়স থেকেই। ২০১২ সালে আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয় আনন্দমেলায় ছোটদের গল্প প্রকাশিত হলে সিরিয়াস লেখালিখির শুরু। এরপর গল্প, অণুগল্প, কবিতা, ছড়া, রম্যরচনা, প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে- দেশ, রবিবাসরীয় আনন্দবাজার পত্রিকা, সানন্দা ওয়েব, আনন্দমেলা, নবকল্লোল, শুকতারা, কিশোর ভারতী, সন্দেশ, চিরসবুজ লেখা, বিচিত্র পত্র, কথাসাহিত্য, মাসিক বসুমতী, মাসিক কৃত্তিবাস, তথ্যকেন্দ্র, মৌচাক, দৈনিক স্টেটসম্যান, প্রসাদ, কলকাতা পুরশ্রী, অভিষিক্তা-র মত অসংখ্য প্রথম শ্রেণীর বাণিজ্যিক পত্র- পত্রিকায়। ইতিপূর্বে প্রকাশিত কিশোর গল্প সংকলন ‘ইচ্ছে ফুলের গন্ধ’, ‘আলো ছায়া রঙ’ এবং বড়দের গল্প সংকলন ‘ধুলো পথের মায়া’। সাহিত্য রচনার পাশাপাশি লিখেছেন কয়েকটি স্কুলপাঠ্য বই ও সর্বশিক্ষা অভিযানের পুস্তিকা। বিগত দু’দশক ধরে নিরলস সাহিত্য চর্চার স্বীকৃতি স্বরূপ ‘চাতক’ পত্রিকার পক্ষ থেকে পেয়েছেন “টেগোর ভিলেজ সাহিত্য পুরস্কার ২০২০”। লেখকের অন্যতম শখ বই পড়া এবং গান শোনা।
সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায়
ঐতিহ্যময় শহর চন্দননগরের স্থায়ী বাসিন্দা সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করার পরে চন্দননগরের একটি হায়ারসেকেন্ডারি স্কুলে দীর্ঘদিন অর্থনীতির শিক্ষিকা ছিলেন। কৈশোরেই স্কুল ম্যাগাজিনে প্রথম কবিতাটি এবং ১৯৯৬ সালে প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় ‘দিবারাত্রির কাব্য’ পত্রিকায়। ২০০১ সালে ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রথমে কবিতা পরবর্তীকালে গল্প প্রকাশিত হয়। ‘আনন্দবাজারের প্রায় সবকটি বিভাগে, ‘বর্তমান’, ‘আজকাল’, ‘প্রতিদিন’, ‘তথ্যকেন্দ্র’, ‘উত্তরবঙ্গ সংবাদ’ ছাড়াও, ‘অনুষ্টুপ’, ‘কুঠার’, ‘এবং মুশায়ারা’, ‘জলঘড়ি’ ইত্যাদি লিটল ম্যাগাজিনেও তার বড়দের এবং ছোটদের জন্য কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ প্রকাশের ধারা অব্যাহত। আনন্দমেলা শারদীয়ায় দু’বছর তার দুটি উপন্যাস এবং শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকায় একটি গল্প প্রকাশিত হয়েছে। উত্তরবঙ্গ সংবাদ কাগজে তার দুটি উপন্যাস এবং বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় তার চারটি উপন্যাস ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত উপন্যাস নটি, গল্পগ্রন্থ চারটি, এবং কবিতার বই দুটি। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল, গল্পসংগ্রহ, বালিরপুতুল, * মাসাইমারার বিশল্যকরণী, মণিকোঠার বর্ণমালা, হিমশীতল রহস্য নামক ছোটদের এবং চল নিধুবনে, যাযাবর পাখিদের রূপকথা, আয়না, পদ্মপাতার ভেলা নামক বড়দের উপন্যাস।
সুকুমার রায়
সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন শিশু সাহিত্যিক। তাঁর গদ্য – প্রবন্ধ – নাটক – কবিতা বাংলা সাহিত্যকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছে তা এক বিরল দৃষ্টান্ত।
সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়
এই সময়ের কমিকস্-রচয়িতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন শিল্পী। তার সৃষ্ট ‘রাপ্পা রায়’ চরিত্রটি ইতিমধ্যেই ভীষণই জনপ্রিয়। এছাড়া অন্যান্য মজার গল্প নিয়েও তার অসামান্য সমস্ত কাজ রয়েছে।
সোমনাথ দে
সোমনাথ দে আবৃত্তি জগতে এক পরিচিত নাম। মাধ্যমিকের পরে নিয়মিত আবৃত্তি শেখার শুরু আবৃত্তি আচার্য শ্রী উৎপল কুণ্ডুর কাছে। ১৯৮২ সালে কলেজ জীবনে শুরু করেন আবৃত্তি সংগঠন শ্রুতিমঞ্জিল। ১৯৯৬ এ প্রথম আবৃত্তির ক্যাসেট ‘কয়্যার আবৃত্তি’। এরপরে ১৯৯৮ সালে ‘ভাবুন মশাই ভাবুন’ এবং ২০০৪ সালে আবৃত্তি ব্যান্ড এর সিডি ‘১ এর পিঠে ৫ প্রকাশিত হয়। সেই ১৯৮২ থেকে আজও সোমনাথ দে’র নির্দেশনায় পথ চলছে শ্রুতিমঞ্জিল। আবৃত্তি নিয়ে কাজ করেছেন বিভিন্ন জনপ্রিয় আবৃত্তি শিল্পীদের সাথে। শ্রুতিমঞ্জিলের জনপ্রিয় নিবেদনের মধ্যে কামাল পাশা, দেবতারগ্রাস, নারী, আলোর পথযাত্রী, শপথ উল্লেখ্য। কবিতার বারান্দা সেই দীর্ঘ পথচলার একটি ফসল। আশাকরি এই বইটি বিভিন্ন আবৃত্তি শিল্পীদের কাছে সানন্দে গৃহীত হবে।
হরিনাথ মজুমদার
হরিনাথ মজুমদার। জন্ম ২২ জুলাই ১৮৩৩, মৃত্যু ১৬ এপ্রিল ১৮৯৬। কাঙাল হরিনাথ নামেও তিনি বিখ্যাত। একই সঙ্গে গীতিকার, সাহিত্যস্রষ্টা, সাংবাদিক ও সম্পাদক। তাঁর কোনো কোনো গান স্বামী বিবেকানন্দকেও মুগ্ধ করেছিল। সেকালে গ্রামে গঞ্জে কাঙাল হরিনাথ একটি অতি পরিচিত জনপ্রিয় নাম। সংবাদ সাহিত্যে তাঁর অবদান বিস্মৃত হবার নয়। তাঁর জীবন ও গ্রন্থবিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা আছে পুস্তক-অন্তর্গত সম্পাদকীয় ভূমিকায়।
অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য। বইটি সম্পাদনা করেছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক গবেষক বঙ্কিম ও রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ বিশ্বভারতীর প্রাক্তন রবীন্দ্র অধ্যাপক। তাঁর প্রথম সম্পাদিত গ্রন্থ বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন (১৯৬৬)। গ্রন্থসম্পাদনাক্ষেত্রে তাঁর খ্যাতি অবিসংবাদিত। তিনি সুদীর্ঘকাল বিশ্বভারতী পত্রিকা সম্পাদনা করে আসছেন। তাঁর বিখ্যাত বই বঙ্কিমচন্দ্রজীবনী।